পাহাড়,নদী, অরণ্য, সমূদ্রবেষ্ঠিত চট্টগ্রাম এক বৈচিত্র্যময় জনপদ। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অনেকগুলো নদী এ বিভাগের বিভিন্ন জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বংগোপ্সাগরে পতিত হয়েছে, নিম্নে জেলাভিত্তিক নদনদীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল।
চট্টগ্রাম জেলাঃ
কর্ণফুলী নদীঃ
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রধান নদী। এটি ভারতেরমিজোরামের লুসাই পাহাড়ে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়েপ্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামেরপতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীরমোহনাতে বাংলাদেশের প্রধান সমূদ্র বন্দরচট্টগ্রাম বন্দরঅবস্থিত। এই নদীরদৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার।
কর্ণফুলীনদীর নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছেযে, আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমেপড়েন। একজ্যোৎস্নাস্নাত রাতে তাঁরা দুই জন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগকরছিলেন। নদীরপানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজাএকটি ফুল পানিতেপড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটা উদ্ধারেরজন্য পানিতে ঝাঁপিয়েপড়েন। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান, তাঁরআর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন, কিন্তু সফল হন নি।রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এইকরুণ কাহিনী থেকেইনদীটির নাম হয় 'কর্ণফুলী।মার্মা আদিবাসীদের কাছে নদীটির নাম কান্সা খিওং.
হালদা নদীঃ
হালদা বাংলাদেশেরদক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী।পার্বত্য চট্টগ্রামেরবাটনাতলীপাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে এটিফটিকছড়িরমধ্য দিয়েচট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশকরেছে। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পরে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েফটিকছড়িরবিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, ও অন্যান্য অংশ, হাটহাজারী, রাউজান, এবং চট্টগ্রাম শহরেরকোতোয়ালী থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটিকালুরঘাটেরনিকটেকর্ণফুলীনদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮১ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২৯কিলোমিটার অংশ সারা বছর বড় নৌকা চলাচলের উপযোগী থাকে।হালদা খালের উৎপত্তি স্থলমানিকছড়ি উপজেলারবাটনাতলী ইউনিয়নেরপাহাড়ী গ্রাম সালদা। সালদার পাহাড়ী র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকেহালদা নামকরণ হয়।সালদা নামে বাংলাদেশে আরো একটি নদী আছে যেটি ভারতেরত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিতহয়েছে।
সাঙ্গু নদীঃ
সাঙ্গুনদী, স্থানীয়ভাবেশঙ্খনদী, বাংলাদেশেরদক্ষিণেপার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেঅবস্থিত একটি পাহাড়িনদী।কর্নফুলীর পর এটি চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী।বাংলাদেশেরঅভ্যন্তরে যে কয়টি নদীর উৎপত্তি তার মধ্যে সাঙ্গু নদীঅন্যতম।মিয়ানমারসীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার মদক এলাকারপাহাড়ে এ নদীর জন্ম।বান্দরবান জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ওপর দিয়েপ্রবাহিত হয়ে এটিবঙ্গোপসাগরে গিযে মিশেছে।উৎসমুখ হতেবঙ্গোপসাগরপর্যন্ত এইনদীর দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার।সাঙ্গু নদী বান্দবান জেলার প্রধানতমনদী। বান্দরবান জেলা শহরও এ নদীরতীরে অবস্থিত। এ জেলার জীবন–জীবিকার সাথেসাঙ্গু নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িত।বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগেরক্ষেত্রে এ নদী একটি অন্যতম মাধ্যম।
ডাকাতিয়া নদীঃ
ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য-২০৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশের কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদী। নদীটি ভারতের ত্রিপুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা-লাকসাম চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। যা লক্ষ্মীপুরের হাজিমারা পর্যন্ত বিস্তৃত। চাঁদপুর থেকে এই ডাকাতিয়া নদী যোগ হয়েছে কুমিল্লার গোমতীর সঙ্গে ইহা ২৩০.২০ অক্ষাংশে এবং ৯১০.৩১ দ্রাঘিমা বিস্তৃত। যা বামদিকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফেনী নদীতে মিশেছে।
মেঘনা নদীঃ
বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী।উৎপত্তিস্থল হতে ২২০০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরো পূর্ব দিকে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সবশেষে পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম ধারণ করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়। মেঘনা নদী বাংলাদেশ এর একটি অন্যতম প্রধান নদী।পূর্ব ভারতের পাহাড় থেকে উদ্ভূত মেঘনা নদী সিলেট অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চাঁদপুরের কাছে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগর এ প্ রবাহিত হয়েছে।চাঁদপুরের উপর দিয়ে দেশের ৯০ ভাগ নদনদীর পানি বঙ্গপোসাগরে প্রবাহিতহয়।ফলে মেঘনা মোহনা বর্ষার এই সময়টাতে হয়ে উঠে ভয়ংকর।কারো কারো মতে এই স্থানটি আফ্রিকার বার্মুডা ট্রায়াঙ্গালের চাইতেও ভয়ঙ্কর হয়েউঠেবর্ষায়।প্রতি সেকেন্ডে এখানেব র্তমানে পানির তীব্রতা ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত।প্রশস্ততম মেঘনা নদী লক্ষ্মীপুর জেলাকে বৃহত্তর বরিশাল জেলা থেকে পৃথক করেছে।জেলায় মোট ১১৮ বর্গকি. মি. নদী পথ রয়েছে।নদী পথ জেলার মোট আয়তন ২৩%।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস